ঢাকা ০৮:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাণ্ডিত্য ফলাবার ব্যামো এবং বছরের সেরা হাসি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:০১:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯
  • ১৯৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এক ছোকরার বিয়ে করার বড় শখ। কিন্তু কিছুতেই হয়ে উঠছিল না। ওদের পরিবারে একমাত্র শ্রীহনুমানের পুজো হয়— অন্য কোনো দেবতা সেখানে কল্কে পান না— তাই ত্রিসন্ধ্যা তাঁরই পুজো করে আর কাকুতি-মিনতি করে, ‘হে ঠাকুর আমার একটি বউ জুটিয়ে দাও।’ ওদিকে এরকম ঘ্যানর ঘ্যানর শুনে হনুমানের পিত্তি চটে গিয়েছে। শেষটায় একদিন স্বপ্নে দর্শন দিয়ে হুঙ্কার দিলেন, ‘ওরে বুদ্ধু, বউ যদি জোটাতে পারতুম, তবে আমি নিজে বিয়ে না করে Confirmed Bachelor হয়ে রইলুম কেন?’’

সৈয়দ মুজতবা আলীর গল্প শুনে আপনার চিত্ত হাস্যরসে উদ্বেলিত হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। কিন্তু এখন যে ঘটনার উল্লেখ করব পড়ে আপনি অজান্তেই হেসে উঠতে পারেন।

গত নভেম্বরে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া শিল্পীদের নাম ঘোষণা করা হয়। এতে ২০১৭ এবং ২০১৮ সালের সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয় ফজলুর রহমান বাবু ও মোশাররফ করিমের। ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘গহীন বালুচর’ সিনেমায় ফজলুর রহমান বাবু ও ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘কমলা রকেট’ সিনেমায় মোশাররফ করিমের কৃতিত্বের জন্য এই পুরস্কার। এহেন কাণ্ডের পর অনেকেই মুচকি হেসেছেন। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন: ‘কৌতুক অভিনেতা বাছাই করাও একটা কৌতুক বটে!’

ফজলুর রহমান বাবু ও মোশাররফ করিমের মতো শক্তিশালী চরিত্রাভিনেতা এ পুরস্কার পেতেই পারেন, যদি তারা কৌতুকাভিনেতার চরিত্রে অভিনয় করে থাকেন। কিন্তু তারা কোনো কৌতুক চরিত্রে অভিনয় করেননি। ফজলুর রহমান বাবুর ভাষায়, ‘এই পুরস্কারের ক্যাটাগরি হচ্ছে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা কৌতুক চরিত্র। কিন্তু আমার চরিত্রটি কৌতুক চরিত্র ছিল না। আমি যে চরিত্রে অভিনয় করেছি সেটাকে খল চরিত্র বলা যেতে পারে।’

অন্যদিকে মোশাররফ করিম বলেন, ‘কৌতুকপূর্ণ বা কমেডি চরিত্র আমার কাছে অন্য সব চরিত্রের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কমলা রকেট চলচ্চিত্রে আমি যে চরিত্রে অভিনয় করেছি সেটি কোনোভাবেই কমেডি বা কৌতুক চরিত্র নয়।’

এই দুই অভিনয়শিল্পী কৌতুক চরিত্রে অভিনয় না-করুক কিন্তু বিষয়টি নিয়ে যে হাস্যরস তৈরি হয়েছিল তাতে চলচ্চিত্রের কল্যাণ কতটুকু হয়েছে জানা না-গেলেও, একটা উপকার অন্তত হয়েছে। কারণ সিগিসমুন্ড ফন রাডেকি বলেছেন, ‘হাস্যরস মানুষে মানুষে যোগসূত্র স্থাপন করে।’ সম্মানিত জুরি সদস্যরা তাদের অভিজ্ঞ বিচারকি ক্ষমতা দিয়ে যথেষ্ট হাস্যরস তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর রাডেকি যদি ঠিক বলে থাকেন, তবে হাস্যরসিকদের মধ্যে একটা যোগসূত্রও স্থাপন হয়েছিল বৈকি!

ফজলুর রহমান বাবু এবং মোশাররফ করিম ভক্তরা দাবি তুলেছিলেন, আপনারা এই পুরস্কার পরিহার করুন। অবশ্য শোবিজের অনেকেরই একই দাবি ছিল। কিন্তু সর্বশেষ ফজলুর রহমান বাবু পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি উক্তি মনে পড়ে গেল। উক্তিটি হলো— ‘মধু তার নিজ মূল্য নাহি জানে।’ মোশাররফ করিম এর মূল্য বুঝেছিলেন। এজন্য রাষ্ট্রীয় এই সম্মাননা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে সেকথার জানানও দিয়েছেন তিনি।

যবনিকার আগে এই বিষয়ে এক জুরি সদস্যর বক্তব্য তুলে ধরছি। তার ভাষায়, ‘সিনেমার পরিচালক, প্রযোজক কৌতুক অভিনেতা হিসেবে মোশাররফ করিম ও ফজলুর রহমান বাবুর নাম জমা দিয়েছিলেন। তার উপর ভিত্তি করেই এই ক্যাটাগরিতে তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে।’

এ বক্তব্য পড়ার পর মুজতবা আলীর আরেকটি গল্প না বললেই নয়। তার ভাষায়, ‘জর্মনদের যে পাণ্ডিত্য ফলাবার ব্যামো আছে সে-বিষয়ে স্বয়ং জর্মনরাই সচেতন।’ জার্মানদের মতো জুরি বোর্ডও এখানে সচেতন বলেই মনে হয়। তাঁরাও এমনই পাণ্ডিত্য দেখালেন যে, পরিচালক-প্রযোজক চরিত্রটিকে কৌতুক চরিত্র বললেন আর তাঁরাও তাই মেনে নিলেন!

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পাণ্ডিত্য ফলাবার ব্যামো এবং বছরের সেরা হাসি

আপডেট টাইম : ০৯:০১:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এক ছোকরার বিয়ে করার বড় শখ। কিন্তু কিছুতেই হয়ে উঠছিল না। ওদের পরিবারে একমাত্র শ্রীহনুমানের পুজো হয়— অন্য কোনো দেবতা সেখানে কল্কে পান না— তাই ত্রিসন্ধ্যা তাঁরই পুজো করে আর কাকুতি-মিনতি করে, ‘হে ঠাকুর আমার একটি বউ জুটিয়ে দাও।’ ওদিকে এরকম ঘ্যানর ঘ্যানর শুনে হনুমানের পিত্তি চটে গিয়েছে। শেষটায় একদিন স্বপ্নে দর্শন দিয়ে হুঙ্কার দিলেন, ‘ওরে বুদ্ধু, বউ যদি জোটাতে পারতুম, তবে আমি নিজে বিয়ে না করে Confirmed Bachelor হয়ে রইলুম কেন?’’

সৈয়দ মুজতবা আলীর গল্প শুনে আপনার চিত্ত হাস্যরসে উদ্বেলিত হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। কিন্তু এখন যে ঘটনার উল্লেখ করব পড়ে আপনি অজান্তেই হেসে উঠতে পারেন।

গত নভেম্বরে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া শিল্পীদের নাম ঘোষণা করা হয়। এতে ২০১৭ এবং ২০১৮ সালের সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয় ফজলুর রহমান বাবু ও মোশাররফ করিমের। ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘গহীন বালুচর’ সিনেমায় ফজলুর রহমান বাবু ও ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘কমলা রকেট’ সিনেমায় মোশাররফ করিমের কৃতিত্বের জন্য এই পুরস্কার। এহেন কাণ্ডের পর অনেকেই মুচকি হেসেছেন। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন: ‘কৌতুক অভিনেতা বাছাই করাও একটা কৌতুক বটে!’

ফজলুর রহমান বাবু ও মোশাররফ করিমের মতো শক্তিশালী চরিত্রাভিনেতা এ পুরস্কার পেতেই পারেন, যদি তারা কৌতুকাভিনেতার চরিত্রে অভিনয় করে থাকেন। কিন্তু তারা কোনো কৌতুক চরিত্রে অভিনয় করেননি। ফজলুর রহমান বাবুর ভাষায়, ‘এই পুরস্কারের ক্যাটাগরি হচ্ছে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা কৌতুক চরিত্র। কিন্তু আমার চরিত্রটি কৌতুক চরিত্র ছিল না। আমি যে চরিত্রে অভিনয় করেছি সেটাকে খল চরিত্র বলা যেতে পারে।’

অন্যদিকে মোশাররফ করিম বলেন, ‘কৌতুকপূর্ণ বা কমেডি চরিত্র আমার কাছে অন্য সব চরিত্রের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কমলা রকেট চলচ্চিত্রে আমি যে চরিত্রে অভিনয় করেছি সেটি কোনোভাবেই কমেডি বা কৌতুক চরিত্র নয়।’

এই দুই অভিনয়শিল্পী কৌতুক চরিত্রে অভিনয় না-করুক কিন্তু বিষয়টি নিয়ে যে হাস্যরস তৈরি হয়েছিল তাতে চলচ্চিত্রের কল্যাণ কতটুকু হয়েছে জানা না-গেলেও, একটা উপকার অন্তত হয়েছে। কারণ সিগিসমুন্ড ফন রাডেকি বলেছেন, ‘হাস্যরস মানুষে মানুষে যোগসূত্র স্থাপন করে।’ সম্মানিত জুরি সদস্যরা তাদের অভিজ্ঞ বিচারকি ক্ষমতা দিয়ে যথেষ্ট হাস্যরস তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর রাডেকি যদি ঠিক বলে থাকেন, তবে হাস্যরসিকদের মধ্যে একটা যোগসূত্রও স্থাপন হয়েছিল বৈকি!

ফজলুর রহমান বাবু এবং মোশাররফ করিম ভক্তরা দাবি তুলেছিলেন, আপনারা এই পুরস্কার পরিহার করুন। অবশ্য শোবিজের অনেকেরই একই দাবি ছিল। কিন্তু সর্বশেষ ফজলুর রহমান বাবু পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি উক্তি মনে পড়ে গেল। উক্তিটি হলো— ‘মধু তার নিজ মূল্য নাহি জানে।’ মোশাররফ করিম এর মূল্য বুঝেছিলেন। এজন্য রাষ্ট্রীয় এই সম্মাননা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে সেকথার জানানও দিয়েছেন তিনি।

যবনিকার আগে এই বিষয়ে এক জুরি সদস্যর বক্তব্য তুলে ধরছি। তার ভাষায়, ‘সিনেমার পরিচালক, প্রযোজক কৌতুক অভিনেতা হিসেবে মোশাররফ করিম ও ফজলুর রহমান বাবুর নাম জমা দিয়েছিলেন। তার উপর ভিত্তি করেই এই ক্যাটাগরিতে তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে।’

এ বক্তব্য পড়ার পর মুজতবা আলীর আরেকটি গল্প না বললেই নয়। তার ভাষায়, ‘জর্মনদের যে পাণ্ডিত্য ফলাবার ব্যামো আছে সে-বিষয়ে স্বয়ং জর্মনরাই সচেতন।’ জার্মানদের মতো জুরি বোর্ডও এখানে সচেতন বলেই মনে হয়। তাঁরাও এমনই পাণ্ডিত্য দেখালেন যে, পরিচালক-প্রযোজক চরিত্রটিকে কৌতুক চরিত্র বললেন আর তাঁরাও তাই মেনে নিলেন!